28 Feb 2025, 04:00 pm

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের মশাল মিছিল থামিয়ে দিল পুলিশ ; অনেক নেতা-কর্মী আটক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সমিান্তবাণী ডেস্ক :  ভারতে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের মশাল মিছিল থামিয়ে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীকে এমপি পদে অযোগ্য ঘোষণা এবং শিল্পপতি আদানির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে সরকারের নীরবতার বিরুদ্ধে কংগ্রেস সর্বাত্মকভাবে মাঠে নেমেছে। এই পদক্ষেপকে গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছে কংগ্রেস। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন  বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ‘ওবিসি’ সমাজকে অপমান করেছেন।

গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে দিল্লির লাল কেল্লা থেকে শুরু হওয়া মশাল মিছিলে জড়িত অনেক কংগ্রেস এমপি, নেতা ও কর্মীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। তাদের হেফাজতে নিতে পুলিশ তাদের রাস্তায় টেনে গাড়িতে তোলে বলে অভিযোগ।  কংগ্রেসের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কেসিআরের দল বিআরএস-এর এমপিও শামিল  হয়েছিলেন।

মশাল মিছিল বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে কংগ্রেস বলেছে, ‘প্রতি পদক্ষেপে আমাদের থামানোর এবং আমাদের কণ্ঠকে দমন করার ফাঁপা  প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে স্বৈরশাসক ভীত এবং নার্ভাস। আমাদের সত্য দেখে বিচলিত হয়েছে। তবে আমরা কোনো মূল্যে হাল ছাড়ব না। স্বৈরশাসক হারবে, গণতন্ত্র জিতবে।

মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য একটি বার্তায় কংগ্রেস বলেছে, এই স্বৈরশাসকের ভয় দেখুন, আদানির নাম এলেই তারা সংসদ নিঃশব্দ করে দেন। সড়কে বিক্ষোভ হলে পুলিশ বসিয়ে দেয়।

জানা গেছে কংগ্রেসের বিক্ষোভস্থলে পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়ে দেয়। এবং কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা জড়ো হলে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিতে শুরু করে। কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা পি চিদাম্বরম, যিনি প্রতিবাদে শামিল হতে যাচ্ছিলেন, তাকেও থামিয়ে দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে দিল্লির লাল কেল্লার সামনে ধর্নায় বসেন কংগ্রেস এমপি জয়রাম রমেশ, ইমরান প্রতাপগড়ি এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরী।

জয়রাম রমেশ বলেন, এটা গণতন্ত্রের হত্যা! সংসদের ভেতরে ও বাইরে আমাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করা হচ্ছে। আমাদের নেতাকে অযোগ্য ঘোষণা করছে এবং এখন আমাদের চলতে দিচ্ছে না। এটা কোন গণতন্ত্র?

কংগ্রেস কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের বহনকারী বাস থামিয়ে দিলে এ সময়ে পুলিশ ও কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপাল দিল্লিতে কংগ্রেস কর্মীদের ‘মশাল মিছিল’ থামানোর বিষয়ে বলেন, দেশে গণতন্ত্রের দুর্দশা দেখা উচিত। আমরা শান্তিপূর্ণ মশাল মিছিল করছি। গতকাল আমরা পুলিশ ও কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং তারা রাজি হয়েছিলেন। আজ তারা আমাদের কর্মীদের যত্রতত্র থামিয়ে আটক করেছে।

কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, রাহুল গান্ধী ইস্যুতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইও চলবে। বুঝিয়ে দেব, ‘ওবিসি’র (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) অজুহাত দিয়ে মিথ্যাচার করছে বিজেপি। রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা পূর্ণেশ মোদি ‘ওবিসি’ নন। নীরব মোদিও জৈন। ললিত মোদি বানিয়া। তাহলে রাহুল গান্ধী কাকে অপমান করলেন?

কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর দাবি, মোদীজি দয়া করে  ওবিসিদের ঠিকাদার হওয়ার চেষ্টা না করলেই মঙ্গল। ওবিসিদের জন্য কংগ্রেসই ১৯৯২ সালে মণ্ডল কমিশন কার্যকর করেছে। ২০০৬ সালে উচ্চশিক্ষায় ওবিসি সংরক্ষণ দিয়েছে। ২০১১-১২তে কংগ্রেস সরকারই জাতি গণনা করেছে। তাই হিম্মত থাকলে মিথ্যা ওবিসি ইস্যু না তুলে স্রেফ সংবাদ সম্মেলন ডেকে রাহুল গান্ধীর তোলা ইস্যুতে সাফাই দিন নরেন্দ্র মোদি। তবেই বুঝব।

অন্যদিকে, বিজেপি মনে করছে ‘মোদী’ পদবি নিয়ে মন্তব্য করে রাহুল গান্ধী দেশের অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদেরই অপমান করেছেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা বলেছিলেন,  ‘ওবিসি সম্প্রদায়কে ‘চোরের সঙ্গে তুলনা’ করে রাহুল গান্ধী আসলে তার জাতপাত সংক্রান্ত নোংরা মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তবে  একেবারে সম্প্রতি তিনি যা করেছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক কার্যকলাপকে এই নিম্নমানে নামিয়ে এনেছেন।’

গুজরাট বিজেপির সভাপতি সিআর পাটিল বলেছেন, ‘রাহুল যে কোনও জায়গায় যেকোনো কথা বলেন। উনি গোটা সমাজকে সে অপমান করেছে। এতে ‘মোদী সম্প্রদায়’ ক্ষুব্ধ।। এ কারণে আদালত তাকে দোষী ঘোষণা করেছে।’

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ে কর্ণাটকে প্রচারে গিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘সব চোরেদের পদবি ‘মোদী’ হয় কেন?’ আইপিএল  দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ললিত ‘মোদী’, ব্যাঙ্ক-ঋণ মামলায় পলাতক  নীরব ‘মোদী’র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তুলনা টেনেছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ‘পদবি অবমাননার’ অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ ও ৫০০ ধারায় অপরাধমূলক মানহানির মামলা করেছিলেন গুজরাটে বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদী। সেই মামলায় সাজার মুখে পড়েন রাহুল গান্ধী। পরবর্তীতে আদালত থেকে জামিন পেলেও ২ বছরের কারাদণ্ডের ঘোষণার জেরে তার এমপি পদ খারিজ করে দেন সংসদের স্পিকার ওম বিড়লা। এরপর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে  বিরোধীরা একজোট হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14942
  • Total Visits: 1679991
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1741

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শুক্রবার, ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
  • ২৮শে শা'বান, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, বিকাল ৪:০০

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
     12
2425262728  
       
15161718192021
293031    
       
  12345
20212223242526
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018